Skip to main content

ভূমি আইন অনুযায়ী দলিলের প্রকারভেদ

 #জমির_দলিল মোট ৯ প্রকার। যথাঃ-

(১) সাফ-কবলা দলিল;

(২) দানপত্র দলিল;

(৩) হেবা দলিল;

(৪) হেবা বিল এওয়াজ দলিল;

(৫) এওয়াজ দলিল;

(৬) বন্টন নামা দলিল;

(৭) অছিয়তনামা দলিল;

(৮) উইল দলিল; ও

(৯) নাদাবি দলিলবা মুক্তি নামা দলিল।


#সাফ_কবলা_দলিল

কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অন্যের নিকট বিক্রয় করে যে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারী করে দেন তাকে সাফ-কবালা বা বিক্রয় কবলা বা খরিদা কবলা বলা হয়। এই কবলা নির্ধারিত দলিল ষ্ট্যাম্পে লিখার পর দলিল দাতা অর্থাৎ বিক্রেতা সাবরেজিষ্টারী অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিল সহি সম্পাদন করে গ্রহিতা অর্থাৎ খরিদ্দারের বরাবরে রেজিষ্টারী করে দিবেন। এই দলিল রেজিষ্টারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলিলের তফছিলে লিখিত অর্থাৎ বিক্রিত ভূমির যাবতীয় স্বত্ব দলিল দাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে দলিল গ্রহিতাতে অর্থাৎ খরিদ্দারের উপর অর্পিত হলো। দলিলদাতা ময় ওয়ারিশানক্রমে উক্ত জমি হতে নিঃস্বত্ববান হলেন।


#দানপত্র_দলিল

যে কোন সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। এই দানপত্র দলিলে শর্তবিহীন অবস্থায় সকল প্রকার ক্ষমতা প্রদানের দান করতে হবে। স্বত্ব সম্পন্ধে দাতার কোন প্রকার দাবী থাকলে দানপত্র শুদ্ধ হবে না।

#হেবা_দলিল

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল, এই দলিল কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা সর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রয়, কট রেহান ও রূপান্তর ইত্যাদি সকল ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। স্বত্ব সম্বন্ধে দাতার কোনরূপ দাবী থাকলে সেই দান বা হেবা শুদ্ধ হবে না এবং তা যে কোন সময় বাতিলযোগ্য। এরূপ দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না।


#হেবা_বিল_এওয়াজ

এই হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি দানপত্র দলিল এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় বটে। কিন্তু ইহা কোন কিছুর বিনিময়ে হয়ে থাকে, যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তছবিহ, মোহরানার টাকা, এমন কি যে কোন জিনিষের বিনিময়েও হতে পারে, যেমন আংটি ইত্যাদি। এই হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় গ্রহিতা যাবতীয় হস্তান্তর ও রূপান্তরের সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহিতাতে অর্পিত হবে। দাতার স্বার্থে কোন প্রকার স্বত্ব দাতার জন্য সংরক্ষিত থাকলে দলিল শুদ্ধ হবে না। এই হেবা বিল এওয়াজ অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে। এই হেবা বিল এওয়াজ যদি টাকা বিনিময়ে হয় এবং ক্রমিক ওয়ারিশী সূত্রে আগে পরে তিন ধাপের পরের ব্যক্তিকে বা তৃতীয় ব্যক্তিকে হেবা বিল এওয়াজ মুলে দান করে থাকে তা হলে শরীক কর্তৃক জানার তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে প্রিয়েমশান করতে পারে।


#এওয়াজ_দলিল

যে কোন সম্প্রদায়ের বা একই সম্প্রদায়ের বা একই বংশের বা কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির সহিত তাহাদের লপ্ত ও সুবিধা মত একের ভূমি অপরকে দিতে পারেন অর্থাৎ পরস্পর এওয়াজ পরিবর্তন সরতে পারেন। এই দলিল অবশ্যই রেজিষ্টারী হতে হবে।

এওয়াজ পরিবর্তন দলিলের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ক এর জমি খ এর বাড়ীর নিকট এবং খ এর জমি ক এর বাড়ীর নিকট। উভয়ের জমিই উভয়ের বেলপ্ত। কাজেই ক তার জমি খ কে এবং তার জমি ক কে দিয়ে উভয়ে একটি দলিল সম্পাদন করে রেজিষ্টারী করে নিল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন দলিল বলে। এই দলিলের কেহ প্রিয়েমশান করতে পারে না।


#বন্টনমানা_দলিল

শরিকগণের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ ছাহাম প্রাপ্ত হয়ে উক্ত ছাহামের বাবদ যে দলিল করতে হয় তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তিতে মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বলা হয়। শরিক দুই প্রকারের, যথা- উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক ও কোন শরিক হতে খরিদ সূত্রে শরিক। ইংরেজীতে বলা হয় কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স এন্ড কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বন্টননামা দলিল করবার সময় সকল শরিকগণ দলিলে পক্ষভুক্ত থেকে ও দস্তখত করে বন্টননামা দলিল করতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। বন্টননামা দলিল রেজিষ্টারী করতে হবে কিন্তু ঘরোয়াভাবে বন্টন করে সকল পক্ষগণ যদি বন্টননামা দলিলে দস্তখত করে থাকেন তা হলেও বন্টননামা কার্যকরী হতে পারে। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে নালিশ করতে পারেন।


#অছিয়তনামা_দলিল

কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি কাউকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অছিয়তকারী ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সকলকে না দিয়ে যদি একজনকে বা কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন এবং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর যদি তাহার উত্তরাধিকারীগণ দাবী উত্থাপন করেন তাহলে যাকে সম্পত্তি অছিয়ত করা হলো সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশের মালিক উত্তরাধিকারী দের মধ্যে সকলেই হবেন।


#উইল_দলিল

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাদের আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। যিনি উইল করলেন তিনি জীবিত কালে একের অধিক উইল করতে পারেন। কিন্তু সর্বশেষ যে উইল করলেন কেবল ঐটাই কার্যকরী হবে।


৯) নাদাবী দলিল

কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে নাদাবী দলিল বলে।

Comments

Popular posts from this blog

স্থাপনা নির্মাণের জন্য জমি ভাগ-বণ্টন ও জরিপ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যৌথ মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে। নিচে বাংলায় ও ইংরেজি টার্মসসহ প্রক্রিয়া সংক্ষেপে দেওয়া হলো:

স্থাপনা নির্মাণের জন্য জমি ভাগ-বণ্টন ও জরিপ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যৌথ মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে। নিচে বাংলায় ও ইংরেজি টার্মসসহ প্রক্রিয়া সংক্ষেপে দেওয়া হলো: ১. ভূমি জরিপ (Land Survey) কেন প্রয়োজন? সঠিক মাপজোক (Accurate Measurement): জমির সীমানা ও আকার নির্ধারণ। অধিকার নিশ্চিতকরণ (Ownership Verification): শরিকানগণের অংশ নিশ্চিত। বিরোধ এড়ানো (Dispute Avoidance): ভবিষ্যৎ সমস্যার সমাধান। স্থাপনার পরিকল্পনা (Construction Planning): সঠিক নকশা তৈরির জন্য। ২. জমি ভাগ-বণ্টনের ধাপ (Steps for Partition): চুক্তি (Agreement): সকল শরিকের লিখিত সম্মতি। অ্যাডভোকেট বা নোটারি পাবলিক দ্বারা বৈধকরণ। বাটোয়ারা মামলা (Partition Suit): কোর্টে জমির দলিল, খতিয়ান ও দাগ নম্বর জমা দিয়ে মামলা। আদালত জরিপ কমিশনার নিয়োগ করবে। দলিল রেজিস্ট্রেশন (Deed Registration): নতুন দলিল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি। ৩. স্থাপনার পূর্বশর্ত (Pre-requisites for Construction): বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন (Approval): পৌরসভা বা পঞ্চায়েত থেকে অনুমোদন। নথি আপডেট (Updated Documents): জমির রেকর্ড, প...

ভূমি জরিপ কেন করা প্রয়োজন?

  ভূমিই  সম্পদ আবার ভূমিই বিপদ ভূমি জরিপ ভূমি জরিপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া , যা জমির সীমানা , অবস্থান , আকার এবং অন্যান্য ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এটি শুধুমাত্র জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসায় সাহায্য করে না , বরং উন্নয়ন পরিকল্পনা , পরিবেশ সংরক্ষণ , কৃষি উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্যও অপরিহার্য। ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । ১ . জমির সীমানা নির্ধারণ ভূমি জরিপের মূল উদ্দেশ্য হল জমির সীমানা স্পষ্ট করা। সীমানা নির্ধারণে ভুল বা বিভ্রান্তি জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। যখন জমির সীমানা পরিষ্কার থাকে , তখন মালিকানা সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যার সমাধান সহজ হয়। যেমন , জমি কেনা বা বিক্রি করার সময় সীমানার স্পষ্টতা থাকলে আইনি ঝামেলা বা ভুলভাল মালিকানা দাবি হতে পারে না । ২ . বিরোধ নিষ্পত্তি ভূমি জরিপ জমির মালিকানা নিয়ে যে কোনো বিরোধ বা বিবাদ সমাধান করতে সাহায্য করে। অনেক সময়...

যত পরিশ্রম করবে, সে তত সফল, তাহলে কেন ব্যার্থতা আমাদের ঘিরে বসে?

  "যে যত পরিশ্রম করবে, সে তত সফল হবে"—এটি একটি পুরনো এবং প্রমাণিত সত্য, যা কর্মসংস্থান এবং ব্যক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে একধাপ এগিয়ে যাই। এর মাধ্যমে কেবল মাত্র একাডেমিক বা পেশাগত সাফল্যই নয়, জীবনের বিভিন্ন দিকেও উন্নতি করা সম্ভব। তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে, সফলতা শুধুমাত্র পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে না; কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন পরিকল্পনা, লক্ষ্য নির্ধারণ, দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা এবং উপযুক্ত সুযোগও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। 1. কঠোর পরিশ্রমের প্রভাব দৃঢ় মনোবল তৈরি : কঠোর পরিশ্রম আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে, যা আপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এই মনোবল সফলতার পথের প্রধান এক কৃতিত্ব। দক্ষতা অর্জন : কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি যেকোনো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। এতে কাজের গুণগত মান উন্নত হয় এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আপনি টিকে থাকতে পারেন। 2. পরিশ্রম এবং সফলতা পরিশ্রম এক ধরনের নিরন্তর প্রচেষ্টা যা কোনো কাজ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে সফলতা শুধুমাত্র পরিশ্রমের ফল নয়। এটি একধরনের প্রক্রি...